খেলাধুলা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য। খেলাধূলা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায় এবং সামাজিক গুণাবলি অর্জনে সাহায্য করে। খেলাধুলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করা। খেলাধুলা শরীর ও মনকে সতেজ রাখে এবং শরীর গঠনের সাথে সাথে সুন্দর চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। দলের সদস্য হয়ে খেলার ফলে দলীয় আনুগত্য, লাইন মেনে চলা, নেতার নির্দেশ পালন করা, শৃঙ্খলাবোধ সমুন্নত বজায় রাখা ইত্যাদি সামাজিক গুণাবলি অর্জন করার মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
এ অধ্যায় শেষে আমরা
ফুটবল খেলা অতি প্রাচীন। কালের বিবর্তনে এ খেলা বর্তমানে একটি আধুনিক খেলায় পরিণত হয়েছে। আধুনিক ফুটবল খেলার উৎপত্তি ইংল্যান্ডে। ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রণয়ন হয় ইংল্যান্ডেই। এই খেলা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে খুব দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও ফুটবল খেলা এখানেও কম জনপ্রিয় নয়। ফুটবল খেলায় আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নাম ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটকা অ্যাসোসিয়েশন বা FIFA। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় ফুটবল খেলা বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। বাংলাদেশও ফিফার সদস্যভুক্ত হয়ে এই খেলাকে সারা দেশে জনপ্রিয় করে তুলছে। ফুটবল বর্তমানে বিশ্বে সর্বজনীন খেলা। এ খেলা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৭টি আইন আছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন খেলার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে একই নিয়মে বিশ্বের সর্বত্র এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নিচে ফুটবল খেলার আইনগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো-
১. মাঠ : ফুটবল খেলার আইনের প্রথমটি হলো মাঠ। মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৩০ গজ, সর্বনিম্ন ১০০ গজ। প্রস্থ সর্বোচ্চ ১০০ গজ সর্বনিম্ন ৫০ গজ
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাঠের মাপ হবে-
ক. দৈর্ঘ্য- ১২০ গজ, প্রস্থ - ৮০ গজ।
খ. দৈর্ঘ্য- ১১৫ গজ, প্রস্থ - ৭৫ গজ।
গ. দৈর্ঘ্য- ১১০ গজ, প্রস্থ - ৭০ গজ।
এই তিনটি মাপের মাঠের যে কোনো একটি মাঠ আন্তর্জাতিক, জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য প্রযোজ্য। তবে মাদ্রাসার ছোট ছেলেদের জন্য দৈর্ঘ্য ১০০ গজ ও প্রস্থ ৫০ গজ নেওয়া যেতে পারে।
১.১ দাগ : প্রত্যেকটি দাগ চওড়া হবে ৫ ইঞ্চি। মাঠের দৈর্ঘ্যের দাগকে টাচ লাইন ও প্রস্থের দাগকে গোল লাইন বলে।
১.২ গোল এরিয়া : দুই গোল পোস্টের উভয় দিকে ৬ গজ এবং সামনের দিকে ৬ গজ নিয়ে উভয় দাগকে একটি সরলরেখা দ্বারা যোগ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ২০ গঙ্গ। এই দাগের ভিতরের জায়গাকে গোল এরিয়া বলে।
১.৩ পেনাল্টি এরিয়া : গোল পোস্টের উভয় দিকে ১৮ গজ এবং সামনের দিকেও ১৮ গজ নিয়ে একটি সরলরেখা টানতে হবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪ গজ। এই ভিতরের আয়তাকার এরিয়াকে পেনাল্টি এরিয়া বলে। ১.৪ পেনাল্টি মার্ক : যে চিহ্নতে বল বসিয়ে পেনাল্টি কিক মারা হয় তাকে পেনাল্টি মার্ক বলে। দুই গোল
পোস্টের মাঝ থেকে সামনের দিকে ১২ গজ দূরে চিহ্ন দিতে হবে যার ব্যাস হবে ৯ ।
১.৫ কর্নার পতাকা : মাঠের চার কোনায় ৪টি পতাকা থাকবে। পতাকা দণ্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট হবে। পোস্টের মাথা চোখা হবে না এবং মাথায় পতাকা লাগানো থাকবে। মাঠের মধ্যরেখার দুইদিকে টাচ লাইন থেকে ১ গজ দূরে দুটি পতাকা থাকবে। একে ঐচ্ছিক পতাকা বলে।
১.৬ কর্নার এরিয়া : কর্নার পতাকাদণ্ড থেকে ১ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। যার মধ্যে বল বসিয়ে কর্নার কিক মারতে হয়।
১.৭ : গোল পোস্ট : মাটি থেকে ক্রসবারের নিচ পর্যন্ত উচ্চতা ৮ ফুট ও দুই গোল পোস্টের মাঝের দূরত্ব ৮
গজ হবে। গোল পোস্টের পিছনে জাল টাঙ্গাতে হবে। জাল এমনভাবে টাঙ্গাতে হবে যেন গোল কিপারের চলাফেরায় কোনো অসুবিধে না হয় ।
১.৮ সেন্টার সার্কেল : মধ্যরেখার মাঝখান থেকে ১০ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করতে হবে যাকে
সেন্টার সার্কেল বলে।
২. খেলার বল : বল গোলাকার হবে। চামড়া বা ঐ জাতীয় বস্তু দ্বারা তৈরি হবে। হাওয়া দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে।
৩. খেলোয়াড়ের সংখ্যা : একটি দল ১৮ জন খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গঠিত হবে। ১১ জন মাঠে খেলবে বাকি ৭ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে থাকবে। তবে আঞ্চলিক বা আন্তঃমাদ্রাসা প্রতিযোগিতায় দলের খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমানো যেতে পারে ।
৪. খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম : একজন খেলোয়াড়ের বাধ্যতামূলক পোশাক হচ্ছে শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিনগার্ড ও বুট। অন্য খেলোয়াড়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এমন কোনো বস্তু বা পোশাক পরা যাবে না।
৫. রেফারি : খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি থাকেন।
৬. ডেপুটি রেফারি : রেফারিকে সাহায্য করার জন্য ২ জন ডেপুটি রেফারি থাকেন। এছাড়া মাঠের বাইরে একজন চতুর্থ রেফারি থাকেন। তিনিও খেলা পরিচালনার ব্যাপারে রেফারিকে সাহায্য করেন।
৭. খেলার সময় : আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে খেলার সময় প্রতি অর্ধে ৪৫ মিনিট, মাঝে বিরতি ১৫ মিনিট ।
৮. খেলা আরম্ভ : খেলা আরম্ভের সময় উভয় দলের খেলোয়াড়গণ নিজ নিজ অর্থে অবস্থান করেন। রেফারির
সংকেতের সাথে সাথে কিক অফের মাধ্যমে খেলা শুরু হয়।
৯. বল খেলার মধ্যে ও বাইরে : বল গড়িয়ে বা শূন্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে গোল লাইন বা টাচলাইন যখন অতিক্রম করে তখন সে বলকে খেলার বাইরে ধরা হয়। বল দাগের উপরে থাকলে খেলার মধ্যে গণ্য হবে।
১০. গোল হওয়া : বল শূন্যে বা মাটি দিয়ে গড়িয়ে দুই পোস্টের ও বারের নিচ দিয়ে গোল লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে গোল হয়েছে বলে ধরা হবে।
১১. অফ সাইড : বল ছাড়া কোনো খেলোয়াড় যদি বিপক্ষের অর্ধে অবস্থান করে এবং তার সামনে বিপক্ষের ২ জন
খেলোয়াড় না থাকে ঐ অবস্থায় যদি সে নিজ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল পায় তাহলে অফ সাইড হবে।
১২. ফাউল ও অসদাচারণ : ফাউল বা অসদাচারণ হলে দু'ধরনের কিক দেওয়া হয়। ক. ডাইরেক্ট ফ্রি কিক, খ ইনডাইরেক্ট ফ্রি কিক। নিচের ১০টি অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ বা ডাইরেক্ট ফ্রি কিক দেওয়া হয়—
১. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে লাথি মারা বা লাথি মারার চেষ্টা করা।
২. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ল্যাং মারা।
৩. বিপক্ষ খেলোয়াড়ের উপর লাফানো।
৪. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আক্রমণ করা।
৫. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করা বা আঘাত করার চেষ্টা করা।
৬. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধাক্কা মারা ।
৭. বল খেলার পূর্বে বিপক্ষের খেলোয়াড়ের সাথে সংঘর্ষ করা।
৮. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরে রাখা।
৯. বিপক্ষ খেলোয়াড়কে থুতু মারা ।
১০. বল হাত দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধরা, বহন করা, আঘাত করা বা সামনে চালিত করা। গোল কিপারের জন্য
এই নিয়ম পেনাল্টি এরিয়ার ভিতর প্রযোজ্য নয় ।
নিম্নের অপরাধগুলোর জন্য পরোক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়-
ক. এমনভাবে খেলা যা রেফারির নিকট বিপজ্জনক বলে মনে হয় ৷
খ. বল আয়ত্তে না থাকা অবস্থায় কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেওয়া।
গ. গোলরক্ষক বল ছুড়ে দেওয়ার সময় তাকে বাধা দেওয়া
ঘ. বল নিজে খেলছে না অহেতুক অপরকে বাধা দেওয়া ।
ঙ. গোলরক্ষককে আক্রমণ করা, গোলরক্ষক যখন তার সীমানার মধ্যে থাকে ।
চ. গোলরক্ষক বল ছেড়ে দেওয়ার পর অন্য খেলোয়াড় টাচ করার পূর্বেই পুনরায় টাচ করা।
ছ. গোলরক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে।
১৩. ফ্রি কিক : যে কিকে সরাসরি গোল হয় তাকে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক বলে। যে কিকে সরাসরি গোল হয় না তাকে পরোক্ষ ফ্রি কিক বলে।
১৪. পেনাল্টি কিক পেনাল্টি এরিয়ার ভিতর রক্ষণভাগের কোনো খেলোয়াড় উক্ত ১০টি অপরাধের যে কোনো একটি করে তাহলে বিপক্ষ দল একটি পেনাল্টি কিক পাবে। তবে গোল কিপারের জন্য ডাইরেক্ট ফ্রি কিক এর ১০ নং নিয়মটি প্রযোজ্য নয়।
১৫. গ্রোয়িং : কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শে বল টাচ লাইন সম্পূর্ণ অতিক্রম করলে বিপক্ষ দল ঐ স্থান থেকে নিয়মানুযায়ী মাঠের মধ্যে বল নিক্ষেপের মাধ্যমে খেলা শুরু করে ঐ নিক্ষেপকে গ্রোয়িং বলে।
১৬. গোল কিক : দুই গোল পোস্ট বাদে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের স্পর্শে যখন ফল গোল লাইন অতিক্রম করে তখন যে কিকের মাধ্যমে খেলা শুরু হয় তাকে গোল কিক বলে।
১৭. কর্নার কিক : কোনো খেলোয়াড় গোলপোস্ট বাদে বল যখন নিজ গোল লাইন অতিক্রম করে তখন বিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক পায় ।
কলাকৌশল : ফুটবল হচ্ছে গতির খেলা, প্রচণ্ড শারীরিক সামর্থ্যের ও শৈলীর খেলা। ইংরেজিতে যাকে বলে Speed, Stamina • Skill এই তিনটি গুণের সমন্বয়ে ঘটলে সে ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। ফুটবল খেলার মৌলিক কলাকৌশলসমূহ যথা- ১. কিকিং, ২. হেডিং, ৩. বিলিং, ৪. ট্র্যাপিং, ৫. ট্যাকলিং, ৬. গোলকিপিং।
১. কিকিং : ফুটবল পারের খেলা। পায়ের সাহায্যে বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারলে ফুটবল খেলার প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করা যায়। পায়ের তিনটি দিক রয়েছে পারের ভিতরের দিক (Inside), পায়ের বাইরের দিক (Outside) এবং পায়ের পাতার উপরের দিকে (Instep)। কিক করার সময় পায়ের এসব অংশ ব্যবহার করতে হয়। পারের বিভিন্ন অংশ দিয়ে বিভিন্নভাবে কিক মারা যায়। তবে ইনসাইড কিক সহজ সঠিকভাবে করা যায় এবং কাছাকাছি হলে এই কিকের মাধ্যমে বল পাস দেওয়া যায়। অনেক সময় ডানদিকের খেলোয়াড়ের কাছে বল পাস দেওয়ার সময় আউটসাইড কিক ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ পায়ের পাতার বাইরের অংশ দিয়ে পাস দেওয়া। সোজা ও মাটি ঘেঁষে বল পাঠানোর জন্য বাম পা বলের বামপাশে স্থাপন করে দৃষ্টি বলের উপর রেখে ডান পায়ের পাতার উপরের অংশ দিয়ে বলের মাঝ বরাবর জোরে আঘাত করতে হবে। হাত দুটো প্রসারিত করে শরীরের ভারসাম্য রাখতে হবে। কিকিং ফুট সামনে দিকে যাবে। বল উঁচুতে পাঠাতে হলে বলের নিচের দিকে কিক করতে হবে ।
২. হেডিং : হেড করার সময় মনে রাখতে হবে বলকে কপালের সাহায্যে আঘাত করতে হবে। হেড করার নিয়ম-
ক. চুলের নিচে কপালের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে হেড করতে হয়।
খ. বলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
গ. শরীরের উপরের অংশ পিছনের দিকে এনে কপাল দিয়ে আঘাত করতে হবে।
ঘ. হাত দুটো সামান্য প্রসারিত থাকবে।
ঙ. ডানে বামে যে দিকেই হেড করা হোক না কেন কপাল দিয়েই হেড করতে হবে শুধু মাথা ঘুরিয়ে সেদিকে বল পাঠাতে হবে।
৩. ড্রিবলিং : পায়ে পায়ে বলকে গড়িয়ে নেওয়াকে ড্রিবলিং বলে। সতীর্থকে সঠিকভাবে বল যোগান দেওয়ার জন্য ড্রিবলিং করা হয়। ড্রিবলিং দু'রকমের-
ক. পারের কাছাকাছি বল রেখে ড্রিবলিং : এই ড্রিবলিং এর সময় দুপায়ের ভিতরের অংশ ব্যবহার করে ড্রিবল
করা হয়।
খ. বল সামান্য দূরে রেখে ড্রিবলিং : এই প্রকার ড্রিবলিং সাধারণত দ্রুততার জন্য করা হয়। বল সামনে বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত দৌড়িয়ে পুনরায় বল আয়ত্তে আনা।
৪. ট্র্যাপিং : হাত ছাড়া শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে বলকে আয়ত্তে আনা বা থামানোকে ট্র্যাপিং বলে। ট্র্যাপিং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
ক. সোল ট্র্যাপ (Sole trap)
খ. শিন ট্র্যাপ (Shin trap )
গ. থাই ট্র্যাপ (Thigh trap )
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ (Chest trap)
ঙ. হেড ট্র্যাপ (Head trap)
ক. সোল ট্র্যাপ : মাটিতে গড়ানো বল পায়ের তলা দিয়ে থামানোকে সোল ট্র্যাপ বলে।
খ. শিন ট্র্যাপ : উঁচু বল মাটিতে ড্রপ খাওয়ার পর শিন দিয়ে বল থামানোকে শিনট্র্যাপ বলে।
গ. থাই ট্র্যাপ : উপরের বা থাই দিয়ে থামিয়ে নিচে ফেলাকে থাই ট্র্যাপ বলে। বল থাই স্পর্শ করার সাথে সাথে থাই নিচের দিকে টানতে হবে। তাহলে বলের গতি কমে সামনে পড়বে।
ঘ. চেস্ট ট্র্যাপ : উঁচু বল বুক দিয়ে থামানোকে বোঝায়। বল টাচ করার সাথে সাথে বুক ভিতরের দিকে টানতে হবে তাহলে বলের গতি থেমে সামনে পড়বে।
ঙ. হেড ট্র্যাপ : কপাল দিয়ে বা ঠেকিয়ে সামনে ফেলাকে হেড ট্র্যাপ বলে। মাথা পিছনের দিকে বাঁকাতে হবে
এবং বল টাচ করার সাথে সাথে পিছনের দিকে নিতে হবে।
৫. ট্যাকলিং : ট্যাকলিং ফুটবল খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাত্মক কৌশল। এই কৌশলের সাহায্যে বিপক্ষের নিকট থেকে বলকে কেড়ে নেওয়া যায়। বিপক্ষের নিকট থেকে কাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার নামই ট্যাকলিং।
৬. গোলকিপিং : ফুটবল খেলায় গোলকিপারের দায়িত্ব অনেক বেশি। গোলকিপার শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে কা থামাতে পারে। হাত দিয়ে বল ধরা বা থামানোই প্রধান। যেমন-
ক. নিচু বা ধরা: কেবল মাটি দিয়ে গড়িয়ে আসে বা সামান্য উপর দিয়ে আসে সে কাকে এক পা সামনে ও অপর পা পিছনে দিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে কোমর থেকে উপরের অংশ সামনে ঝুঁকিয়ে বলটির পিছনে যেৱে দু'হাত দিয়ে বল ধরে বুকের কাছে আনতে হবে।
খ. কোমর সমান উঁচু বল ধরা : প্রথমে বলের লাইনে যেতে হবে। দৃষ্টি বলের দিকে থাকবে, দুহাত বলের নিচে দিয়ে জড়িয়ে বুকের সাথে আটকিয়ে রাখতে হবে।
গ. মাথার উপরের বল ধরা : উঁচু বল ধরার সময় লাফিয়ে বলের পিছনে গিয়ে দু'হাত সামনে উপরের দিকে প্রসারিত করে দু'হাতের তালু বলের পিছনে রেখে কা ধরবে। এছাড়াও যে সমস্ত বা আয়ত্তের বাইরে সেগুলোকে ধরার চেষ্টা না করে পাঞ্চ করে সরিয়ে দিতে হবে।
কাজ-১ : একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল খেলার মাঠ অঙ্কন করে বিভিন্ন এরিয়ার মাপগুলো উপস্থাপন কর। কাজ-২ : পায়ের পাতার বিভিন্ন অংশগুলোর ছবি এঁকে দেখাও ও নাম বল । কাজ-৩ : কপালের কোন অংশ দিয়ে হেড করতে হয় ব্যবহারিক ক্লাসে প্রদর্শন করে দেখাও। |
ক্রিকেট খেলার জন্ম ইংল্যান্ডে। একে 'রাজার খেলা' নামেও অভিহিত করা হয়। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন পোশাক, দিনব্যাপী খেলা, দুপুরের খাবার, বিকেলের চা-নাশতা, নিয়ম-কানুনের মধ্যে অভদ্র আচরণ এসব কিছু মিলে একে অভিজাত খেলা হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্রিকেট খেলার বিপুল জনপ্রিয়তার প্রেক্ষিতে এর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, প্রচার, ব্যবস্থাপনা, প্রভৃতি বিষয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিটির প্রয়োজন অনুভূত হয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশ যথা- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান এসব দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আই.সি.সি গঠিত হয়। ক্রিকেটের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এই কমিটি। এই ৭টি দেশের পর শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করেছে।
ক্রিকেট খেলার আইন-কানুন : ক্রিকেট খেলার আইন ৪২টি। তবে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি আইনের বর্ণনা দেওয়া হলো।
১ পিচ : পিচের দৈর্ঘ্য ২২ গজ, প্রস্থ ১০ ফুট। পিচের দুই মাথায় তিনটি করে স্টাম্প থাকে। স্টাম্পের উচ্চতা ২৮, তিন স্টাম্পের প্রস্থ ৯। স্টাম্পের মাথার উপর দুইটি বেল বসানো থাকে। বেলসহ স্টাম্পের উচ্চতা ২৮ ই”।
২. ক্রিকেট মাঠ : স্টাম্পের মাঝখান থেকে নিচের উভয় পার্শ্বে কমপক্ষে ৬০ গজ থেকে ৭৫ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি অর্ধবৃত্ত আঁকতে হবে। পরে দুই দাগের মাথা সোজা করে রেখা দ্বারা সংযোগ করে দিলেই বাউন্ডারি লাইন হয়ে যাবে। একে ওভাল সাইজ মাঠ বলে। আবার পিচের মাঝখান থেকে ৬০-৭৫ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে বাউন্ডারি লাইন টানা যায়। একে রাউণ্ড সাইজ মাঠ বলে।
৩. খেলোয়াড় : দেশের মাটিতে খেলা হলে ১৪ জন এবং বিদেশের মাটিতে হলে ১৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ১১ জন মাঠে খেলায় অংশগ্রহণ করে। অবশিষ্ট ৩ বা ৪ জন খেলোয়াড় অতিরিক্ত হিসেবে থাকে। অতিরিক্ত খেলোয়াড় শুধু ফিল্ডিং করতে পারে। কিন্তু ব্যাটিং, বোলিং ও উইকেট কিপিং করতে পারবে না। "
৪. বল : বল গোলাকার হবে। বলের পরিধি হবে ৮৩-৯। খেলার পূর্বে বল আম্পায়ার ও উভয়দলের ক্যাপটেন দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
৫. ব্যাট : ব্যাটের দৈর্ঘ্য ৩৮ ইঞ্চির বেশি নয়, প্রস্থ ৪ ইঞ্চির বেশি হবে না
৬. মাঠে খেলোয়াড়দের অবস্থান : একটি দল মাঠে ফিল্ডিং করার সময় বিভিন্ন অবস্থানে দাঁড়াতে হয়। এটা নির্ভর করে বোলারের বোলিং কৌশলের উপর। প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকে। তাই ফিল্ডিং করার সময় ১১ জন খেলোয়াড়কে ১১টি স্থানে দাঁড়াতে হয়। তবে মাঠে এর চেয়ে অনেক বেশি অবস্থান রয়েছে। এই অবস্থানগুলি নিম্নরূপ—
থার্ড ম্যান, ডিপ ফাইন লেগ, লং লেগ, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট, সেকেন্ড স্লিপ, থার্ড স্লিপ, ফার্স্ট স্লিপ, লেগ স্লিপ, স্কয়ার লেগ, গালি, কভার পয়েন্ট, শর্ট একস্ট্রা কভার, সিলি মিড অফ, সিলি মিড অন, শর্ট লেগ, একস্ট্রা কভার, মিড অফ, মিড অন, মিড উইকেট, লং অফ, লং অন।
৭. ওভার : ৬টি শুদ্ধ বলে এক ওভার হয়।
৮. বাউন্ডারি : ব্যাটে বল লেগে মাটি স্পর্শ করে যখন বাউন্ডারি রেখা অতিক্রম করে তাকে বাউন্ডারি বলে। বাউন্ডারি হলে ব্যাটসম্যানের নামে ৪ রান যোগ হয় ।
৯. ওভার বাউন্ডারি : ব্যাটের আঘাতে বল যখন শূন্যে দিয়ে বাউন্ডারি রেখা অতিক্রম করে তখন তাকে ওভার বাউন্ডারি বলে। ওভার বাউন্ডারি হলে ব্যাটসম্যানের নামে ৬ রান যোগ হয়। বল বাউন্ডারি রেখার উপরে পড়লেও ওভার বাউন্ডারি হিসেবে গণ্য হবে।
১০. বাই এবং লেগ বাই: বল যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাটের বা দেহের কোথাও স্পর্শ না করে অতিক্রম করে এবং কোনো রান সংগৃহীত হয় তবে আম্পায়ার বাই এবং বল যদি ব্যাটম্যানের ব্যাট বাদে দেহের বা পোশাকের কোনো অংশ স্পর্শ করে অতিক্রম করে ও কোনো রান সংগৃহীত হয় তবে লেগ বাই এর সংকেত দিবেন।
১১. নো-বল : বোলার নিয়ম-মাফিক বল না করলে নো-বল হয়। নিম্নের কারণগুলোর জন্য নো-বল ডাকা হয়-
ক. বোলারের কনুই ভেঙ্গে গেলে।
খ. ডেলিভারির স্ট্রাইড (পদক্ষেপ) পপিং ব্রিজ অতিক্রম করলে।
গ. বোলার বল করার সময় উইকেটের কোনো ক্ষতি করলে।
ঘ. বল পিচের অর্ধেকের এপাশে পড়লে।
ঙ. বল সরাসরি ব্যাটসম্যানের কাঁধের উপর দিয়ে চলে গেলে।
চ. নিয়মমাফিক ফিল্ডার অবস্থান না করলে।
১২. ওয়াইড বল : বল ব্যাটসম্যানের খেলার নাগালের বাইরে দিয়ে গেলে ওয়াইড বল হয়। তবে টেস্ট খেলা ও একদিনের খেলার ওয়াইড বলের মধ্যে দূরত্বের পাথর্ক্য আছে। একজন ব্যাটসম্যান কী কী কারণে আউট হয়-
১৩. রান আউট : রান নেওয়ার সময় ব্যাটসম্যান যদি ক্রিজে পৌঁছার আগেই ফিল্ডারগণ বল দ্বারা বেল ফেলে দেয় তখন ব্যাটসম্যান রান আউটের আওতায় পড়বে।
১৪. এল.বি.ডব্লিউ : আম্পায়ার যদি মনে করেন যে লেগস্টাম্পের বাইরে বল ছাড়া কোনো বল ব্যাটসম্যানের পায়ে বা শরীরে প্রতিহত না হলে সরাসরি স্টাম্পে আঘাত করতো তবে তিনি ব্যাটসম্যানকে LBW হিসেবে আউট করে দিবেন।
১৫. বোল্ড আউট : বোলারের বল সরাসরি বা ব্যাটের আঘাতে স্টাম্পে লেগে বেল পড়ে যায় তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হবে। একে বোল্ড আউট বলে।
১৬. কট আউট : ব্যাটসম্যান বল মারার পর বল শূন্যে থাকা অবস্থায় ফিল্ডারগণ বল ধরে ফেললে তখন ঐ ব্যাটসম্যান আউট হবে। এই আউটকে কট আউট বলে।
১৭. স্টাম্পড আউট : নো বল ছাড়া ব্যাটসম্যান বল খেলার জন্য ক্রিজ ছেড়ে বাইরে গেলে ঐ সময় যদি উইকেট কিপার বল ধরে বেল ফেলে দেয় অথবা উইকেট ভেঙ্গে দেয় তাহলে ব্যাটসম্যান স্টাম্পড আউট হবে।
১৮. টাইমড আউট : একজন ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান গার্ড নিতে ৩ মিনিটের বেশি সময় নেয় তখন ঐ ব্যাটসম্যান টাইমড আউটের আওতায় পড়বে। টি টোয়েন্টি খেলার এই সময় ১ মিনিট হবে।
১৯. হিট উইকেট : ব্যাটসম্যান বল খেলার সময় যদি শরীর, ব্যাট বা পোশাকে লেগে বেল পড়ে যায় অথবা উইকেট ভেঙ্গে যায় তখন ব্যাটসম্যান হিট উইকেট আউট হবে।
২০. হিট দ্য বল টোয়াইস : ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বা শরীরে বল একবার লাগার পর ব্যাটসম্যান নিজের উইকেট রক্ষার জন্য দ্বিতীয়বার বলে আঘাত করলে বা খেললে আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আউটের আওতায় পড়বে। ২১. ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরা : ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দ্বারা বল ধরলে বা খেললে বা বাধা প্রদান করলে ঐ ব্যাটসম্যান আউট হবে।
২২. ফিল্ডারদের বল ধরতে বাধা প্রদান : ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে ফিল্ডারদের বল ধরতে বাধা প্রদান করলে ঐ ব্যাটসম্যান আউট হবে।
২৩. শতক ও অর্ধশতক : একজন ব্যাটসম্যান বল খেলে ১০০ রান করলে শতক বা সেঞ্চুরি এবং ৫০ রান করলে অর্ধশতক বা হাফ সেঞ্চুরি হয়।
২৪. মেডেন ওভার : একজন বোলার এক ওভারে কোনো রান না দিলে তাকে মেডেন ওভার বলে। সে ওভারে কোনো উইকেট পেলে তাকে মেডেন উইকেট বলে।
কলাকৌশল : ক্রিকেট খেলায় কলাকৌশলকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক. ব্যাটিং, খ. বোলিং, গ. ফিল্ডিং ও ক্যাচিং, ঘ. উইকেট কিপিং
ক. ব্যাটিং : ব্যাটিং-এর প্রাথমিক কলাকৌশলের মধ্যে রয়েছে- গ্রিপ, স্ট্যান্স, ব্যাকলিফট, স্ট্রোক, গ্ল্যান্স, ড্রাইভ ও হুক। এই সমস্ত কলাকৌশল একজন ব্যাটসম্যান সঠিকভাবে প্রয়োগ করে দর্শকদের সহজে আনন্দ দিতে পারে। ব্যাটসম্যান এই কৌশলগুলো প্রদর্শন করে দ্রুত রান নিয়ে কিংবা দর্শনীয় মারের সাহায্যে বাউন্ডারি মেরে দর্শকদের আনন্দে উত্তেজনায় মাতিয়ে তুলতে সক্ষম হয়।
১. গ্রিপ : ব্যাটিং-এ গ্রিপ গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক গ্রিপ উইকেটের উভয় দিকে স্ট্রোক খেলতে সাহায্য করে। একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ব্যাটের হাতলের উপরিভাগ বাম হাতে এবং নিচের অংশ ডান হাতে ধরবে। হাত দুটি পাশাপাশি থেকে উভয় হাতের আঙ্গুল ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে হাতলটিতে ভালোভাবে আটকিয়ে ধরবে। এতে উভয় হাতের তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুল ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো দেখাবে।
২. স্ট্যান্স : একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান পপিং ক্রিজের দুদিকের দু'পা অর্থাৎ ডান পা ফ্রিজের মধ্যে এবং বাম পা বাইরে বোলারের দিকে থাকবে। দুপায়ের উপর ভর রেখে সহজ ও স্বচ্ছন্দে দাঁড়াতে হবে। বাম হাত থাকবে বাম উরুর উপর এবং বাম কাঁধ ও চোখের দৃষ্টি বোলারের দিকে থাকবে।
৩. পিছনে বাটি উঠানো বা ব্যাক গিফট : পিছনে ব্যাট তোলা ব্যাটিং-এর জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। এ সময় দৃষ্টি : বলের দিকে এবং বাম কাঁধ ও কনুই বোলারের দিকে থাকবে।
৪. স্ট্রোক বা বল মারা : বঙ্গের ধরন অনুযায়ী ব্যাটসম্যানকে বিভিন্ন প্রকার স্ট্রোক খেলতে হয়। এই স্ট্রোক কখনো আক্রমণাত্মক আবার কখনো রক্ষণাত্মক। সামনে এগিয়ে যখন আত্মরক্ষামূলক খেলা হয় তখন তাকে ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ স্ট্রোক বলে। এ সময় বাম পা সামনে এগিয়ে যাবে এবং ব্যাট মাটিতে ৩০° থেকে ৪০০ কোণ হবে। এ সময় মাটি ও ব্যাটের অবস্থান ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতো দেখাবে। আবার পিছনে অর্থাৎ উইকেটের দিকে সরে গিরেও রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা যায়। একে ফরওয়ার্ড ডিফেন্সিভ স্ট্রোক বলে।
৫. ড্রাইভ: সঙ্গোরে আক্রমণাত্মক খেলা খুবই দর্শনীয় হয়। পপিং ক্রিজের বাইরে বাম পা এগিয়ে নিয়ে ব্যাট ভানে উপরে উঠিয়ে সঙ্গোরে বলে আঘাত করে বা দূরে পাঠিয়ে দেওয়াকে করোয়ার্ড ড্রাইভ বলে।
৬. হুক শট: বোলার যখন শর্টপিচ বল করে তখন বল ব্যাটসম্যান থেকে বেশ কিছুটা সূত্রে পড়ে লাফিয়ে উঠে। এই লাফিয়ে উঠা কাকে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান তার ডানপায়ের উপর ভর করে ব্যাট শূন্যে ঘুরিয়ে আঘাত করে এবং বা তার অনসাইডে যার। হুকম্পটের জন্য ব্যাটসম্যানের দৃষ্টি, পা ও হাতের কব্জি খুব দ্রুত চালাতে হয়। তবে হুকপট খুবই বিপজ্জনক। দক্ষতা না থাকলে এই শট না নেওয়াই ভালো।
৭. কাট শর্ট : বোলার যদি শট কা করে তাহলে সামনের পা বাড়িয়ে দিয়ে অথবা পিছনের পা ভিতরে দিয়ে বল কাট করা যায়। যারা খেলা শিখছে তাদের জন্য এই কৌশলটি প্রথমে আরম্ভ করতে যাওয়া ঠিক নয়। এই শটে বল নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অফ স্টাম্পের ২ ফুট বাইরে দিয়ে বাওরা বলের লাইন ঠিক করে ব্যাট চালাতে হয়।
৮. লেগ প্ল্যান : এই স্ট্রোকে হাতের কব্জি ও হাতকে খুব জোরের সাথে ব্যবহার করতে হয়। বাটি করা বল সাধারণত স্কয়ার লেগ ও ফাইনলো অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যায়। লেগ প্ল্যান দু'ভাবে হয় প্রথম সামনের বাড়িয়ে দেওয়া পা থেকে, আর দ্বিতীয় পা উইকেটের দিকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে প্লান করতে হয়। ব্যাটসম্যানের বাম পায়ের সামনে বা একটু বাইরে বল পড়লে ডান পা মিডল স্টাম্পের দিকে একটু ঘুরে বলে গ্ল্যান্স করতে হয়।
খ. বোলিং : বোলিং ক্রিকেটের অন্যতম প্রধান কৌশল। উচুমানের বোলিং-এ ব্যাটসম্যান ব্যাটিংয়ে তেমন সুবিধা করতে পারে না। অনেক সময় আক্রমণাত্মক বোলিং-এ ব্যাটসম্যান দ্রুত আউট হয়ে যায় এবং এর ফলে প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করা সহজ হয়। বোলিং-এর প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু কলাকৌশল নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. বলের উপর সঠিক গ্রিপ:কোন ধরনের বল করা হবে তার উপর নির্ভর করে বলের গ্রিপে তারতম্য হয়। ফাস্ট বল ও স্পিন বলের ত্রিশ এক রকম হয় না। তবে যে কোনো ধরনের বা হোক না কেন বলের গ্রিপ নিতে হবে আঙ্গুলের সাহায্যে, হাতের তালু দিয়ে নয়। এতে বল বোলারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. রাম গণ : বোলার দৌড়ে এসে বোলিং ফ্রিজ থেকে ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যেফল করে। কারণ দৌড়ানোর ফলে হাত থেকে ছেড়ে দেওয়ার বলের গতি বৃদ্ধি পায়। গতি সম্পন্ন বলে অনেক ব্যাটসম্যান স্বচ্ছন্দে খেলতে পারে না। রাশ আশে পারের পাতা ব্যবহার করতে হয় এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বারবার পৌড়ে এসে পারের পদক্ষেপ ঠিক করে নিতে হয়। এ সময় শরীরের ভারসাম্য একটু সামনে ঝুঁকানো থাকে।
৩. ডেলিভারি : রান আগের শেষ পর্যায়ে এসে হাত থেকে বা ছেড়ে দেওয়াকে ডেলিভারি বলে। একজন ডানহাতি বোলারকে বলের ডেলিভারির পূর্ব মুহূর্তে বাম পায়ের উপর লাফ দিয়ে শরীরকে পাশের দিকে ঘুরিয়ে নিতে হবে এবং এর সাথে ডান পা সামনে, ডান হাত মুখের কাছাকাছি, বাম হাত সোজা উপরের দিকে ও চোখের দৃষ্টি ব্যাটসম্যানের উপর থাকতে হবে।
৪. ফলো থ্রু- বল হাত থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ফলো-এ করতে হয়। বল ছাড়ার পর পরই শরীর দ্রুত ঘুরে যায়, ডান কাঁধ থাকে ব্যাটসম্যানের দিকে। ডান হাত বাম পায়ের পাশ দিয়ে পিছনের দিকে যেতে থাকে। দৃষ্টি থাকে পিচের উপর যেখানে বল পড়ছে। এ সময় করেক পদক্ষেপ সামনে যেতে হয়।
ফাস্ট বোলিং
১. ফাস্ট বোলিং ইন স্যুইং: দ্রুতগতির বল বা ফাস্ট বোলিং-এ ইন স্যুইং বা করা সহজ। কিন্তু দূরত্ব ও বলের নিশানা ঠিক রেখে বারবার বল করা মোটেই সহজ নয়। দূরত্ব ও নিশানা ঠিক না থাকলে ঐ বোলারকে অনেক রান দিতে হয়। ইন সুইং বলের বৈশিষ্ট্য হলো বা অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে দ্রুত উইকেটের দিকে ছুটে যায়। এই বলের হিপে বলের সেলাই তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মাঝে থাকে। বুড়ো আঙুল, কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলের গোড়ার বলটি ধরতে হবে। বলটি এভাবে ধরার উদ্দেশ্য হলো বলের ডেলিভারির সময় বলের সেলাই লেগ স্লিপের দিকে মুখ করে থাকে। ডেলিভারির সময় ডান হাত অনেক উপরে এবং বাম হাত স্বাভাবিকভাবে নিচের দিকে থাকে। ইন স্যুইং বলে শর্ট লেগে দাঁড়ানো কিল্ডারের কাছে ক্যাচ উঠে ।
২. ফাস্ট বোলিং পাউট স্যুইং: বলের গ্রিপ ইন স্যুইং বঙ্গের মতো তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে বলের সেলাইকে মাঝে রেখে ধরতে হয় এবং বলের নিচে অন্য ৩টি আঙ্গুল থাকে। তবে বলের ডেলিভারির সময় বলের সেলাই প্রথম স্লিপের ফিভারের দিকে মুখ করে থাকে।
স্পিন বোলিং
১.লেগ স্পিন:এখানে স্পিন বোলিং মূলত দু'প্রকারের, সাইড স্পিন ও টপ স্পিন। সাইড স্পিন বোলিং এ বল ঘড়ির কাঁটার মতো কিংবা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে। একজন ডানহাতি স্পিন বোলার যখন একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে স্পিন বোলিং করে এবং বল ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরতে ঘুরতে যায় তাহলে সে বল লেগ ব্রেক করে। আবার ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরে ঘুরে গিয়ে পিচে পড়লে সে বল অফ ব্রেক করে। টপ স্পিন হচ্ছে লেগ ব্রেক ও অফ ব্রেকের সমন্বয়। স্পিন বোলিং-এ বল ডেলিভারির সময় কব্জি বাহুর সমকোণে অবস্থান করে। লেগ স্পিন বোলিং-এ মোটামুটি লেগ স্টাম্পের বরাবরে গিয়ে পিচের উপর পড়ে এবং তারপর গতি পরিবর্তন করে অফ স্টাম্পের দিকে ছুটে যায়। লেগ স্পিনে বলের গ্রিপ তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা অর্থাৎ প্ৰথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঙ্গুলের মাঝে থাকে, বুড়ো আঙ্গুল বল আটকে থাকতে সাহায্য করে। বল ডেলিভারির সময় বাম কাঁধ খুব উঁচু থাকবে না। কব্জি থাকে ঢিলে অবস্থায় এবং তৃতীয় আঙ্গুল বল স্পিনের কাজ করে।
২. অফস্পিন- অফ স্পিন বোলিং-এ প্রথম ও দ্বিতীয় আঙ্গুল বলের সেলাইয়ের উপর একটু ফাঁক রেখে থাকবে। বুড়ো আঙ্গুল বলের সেলাই বরাবর এবং অপর দু'টি আঙ্গুল নিচে পরস্পর লেগে থাকবে। তর্জনী বা প্ৰথম আঙ্গুল বলের সেলাইয়ের উপর নিচের দিকে টান দিয়ে বলটি ঘুরাবে। অফস্পিন বল অবশ্যই ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরবে অর্থাৎ বাম থেকে ডানে ঘুরবে। দরজার নব যেমন ঘুরিয়ে দরজা খুলতে গেলে হাতের কব্জি যে কাজ করে, অফ স্পিন বোলিং-এ কব্জি ঠিক সেভাবে ঘুরবে।
৩. গুগলি— লেগস্পিন বোলার একই গ্রিপে যদি অফস্পিন ডেলিভারি দেয় তাকে গুগলি বলে ।
গ. ফিল্ডিং ও ক্যাচিং- ক্রিকেট খেলায় ব্যাটিং ও বোলিং-এর ন্যায় ফিল্ডিংও সমান চিত্তাকর্ষক এবং খেলার জয় পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফিল্ডিং-এ যখন কোনো ব্যাটসম্যানকে কট আউট করা হয় তখন তার ক্যাচ ধরায় দর্শক আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। প্রত্যেক ক্রিকেটারকে ভালো ফিল্ডার হতে হয়। ফিল্ডিং-এ ক্যাপটেন বা বোলারের ইচ্ছেমতো ফিল্ডারদের দাঁড়াতে হয়। ফিল্ডিং থেকে সংগৃহীত বল সব সময় উইকেট কিপারের কাছে ফেরত পাঠাতে হয়। ফিল্ডিং-এ ক্যাচিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। ব্যাটসম্যানের উঠিয়ে দেওয়া বল ধরার জন্য ফিল্ডারকে বলের লাইনের নিচে যেতে হবে। দৃষ্টি থাকবে বলের উপর। দু'হাত খুলে আঙ্গুলগুলো পাশাপাশি রাখতে হবে। হাতের আঙ্গুল ও তালু নমনীয় থাকবে। বল হাতে স্পর্শ লাগার সাথে সাথে হাত বুকের কাছে টেনে আনতে হবে এবং আঙ্গুল বন্ধ করে ফেলতে হবে। বল ক্যাচিং ছাড়া মাঠে গড়িয়ে যাওয়া বলও ফিল্ডারকে থামাতে, কুড়িয়ে নিতে ও থ্রো করতে হয়।
থ্রোয়িং : আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং-এ দ্রুত ও সঠিকভাবে থ্রো করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে একজন ভালো ব্যাটসম্যানকে রান আউট করা সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, এতে ব্যাটিং সাইডের রান রেট কমে আসে। ভালো থ্রো করতে হলে নমনীয় কব্জি, হাত ও কাঁধ ব্যবহার করতে হয়। বল হাতের মধ্যে আসার পর কেবল থ্রোয়িং করার উদ্যোগ নিতে হয়। একটু আগে বা পরে হলে বল যেমন ধরা যায় না তেমনি থ্রোও করা যায় না। থ্রো করার সময় কব্জি, হাত, কাঁধ, দু'পা-এর সমন্বিত কার্যক্রম দরকার।
ঘ. উইকেট কিপিং : মাঠে খেলোয়াড়দের যত রকমের অবস্থান আছে, তার মধ্যে উইকেট কিপিং সবচেয়ে : গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দল গঠনের সময় সেরা উইকেট কিপারকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া, শক্তিশালী হাত, শারীরিক শক্তি ও সাহসের অধিকারী হতে হয়। এটা সাধারণভাবে বিবেচনা করা হয় যে, একজন উইকেট কিপার জন্মায় কিন্তু তাকে তৈরি করা যায় না। উইকেট কিপারের সাজ-সরঞ্জাম অন্য খেলোয়াড়দের থেকে আলাদা। উইকেট কিপিং এ প্যাড, গ্লাভস, ইনার গ্লাভস, ক্যাপস, গার্ডস, জুতা এই সাজ-সরঞ্জামগুলো প্রয়োজন। ব্যাটসম্যানের মতো উইকেট কিপারকেও স্ট্যান্স নিতে হয়। কারণ তাকে বোলারের কিংবা ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে আসা বল ধরার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হয়। উইকেটের পিছনে পা ফাঁক করে দু'পায়ের উপর সমান ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে বা অর্থ বসার ভঙ্গিতে থাকতে হয়। দেহকে নিচু করে দৃষ্টিকে উইকেটের উপরের লাইনে রাখতে হবে। বাম পা থাকবে মধ্য উইকেটের লাইনে, হাত দুটো পাশাপাশি একসাথে, আঙ্গুল নিচের দিকে এবং দৃষ্টি বলের প্রতি নিবদ্ধ থাকবে।
কাজ-১ : ফার্স্ট বলের গ্রিপ ও স্পিন বলের গ্রিপের পার্থক্যগুলো বলো এবং করে দেখাও। কাজ-২ : ব্যাটসম্যানের স্ট্যান্স মাঠে প্রদর্শন কর। কাজ-৩ : ফাস্ট বল ও স্পিন বলের সময় উইকেট কিপারের পজিশন দেখাও। |
ব্যাডমিন্টন খেলার উৎপত্তি নিয়ে বহুমত থাকলেও অধিকাংশ মানুষের ধারণা এ খেলার জন্ম হয়েছে ভারতের পুনেতে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পুনেয় অবস্থিত ইংরেজ সৈন্যরা স্থানীয় লোকজনদেরকে শাটলকক ও ছোট ব্যাট দিয়ে খেলতে দেখে কৌতূহলবোধ করেন। তারা ছুটিতে ইংল্যান্ডে যেয়ে খেলাটি প্রচলন করেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ঐ খেলা শিখে ভারতে কর্মরত ইংরেজ সৈন্যরা ছুটিতে বাড়ি গিয়ে ব্যাডমিন্টন নামক জায়গায় একত্র হয়ে খেলাটি শুরু করেন। সে থেকে জায়গার নাম অনুসারে ব্যাডমিন্টন খেলার নামকরণ হয়। পরবর্তীকালে দেশে দেশে এ খেলার প্রচলনের ফলে সকল বয়সের ও শ্রেণির নারী-পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলায় জড়িয়ে পড়ে।
ক. খেলার কোর্ট : কোর্টের মেঝে কাঠের হওয়া বাঞ্ছনীয়, তবে তা কোনোভাবেই পিচ্ছিল হতে পারবে না। শাটল সাদা রঙের তাই কোর্টের মেঝে গাঢ় রঙের হবে কিন্তু চকচকে হতে পারবে না। মেঝের রং সাদা ব্যতীত হালকা রঙের হলে কোর্টের দাগ হবে কালো রঙের, অন্যথায় এর রং হবে সাদা। ব্যাডমিন্টন খেলা সিঙ্গলস ও ডাবলসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সিঙ্গেলস কোর্ট— দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ ১৭ ফুট। ডাবলস কোর্ট- দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ২০ ফুট। কোর্টের দু'টি পার্শ্বরেখায় দুই মধ্যবিন্দু বরাবর ব্যাডমিন্টন নেট টাঙ্গানোর জন্য দু'টি খুঁটি বসবে। এই বিন্দু থেকে উভয় দিকে প্রান্তরেখার সমান্তরালে (৬৫) দূরে লাইন টানতে হবে। একে শর্ট সার্ভিস লাইন বলে। আবার উভয় প্রান্তরেখা থেকে কোর্টের অভ্যন্তরে ২৬ দূরে প্রান্তরেখার সমান্তরালে দু'টি লাইন টানতে হবে। একে দ্বৈত খেলার জন্য লং সার্ভিস লাইন বলে। শর্ট সার্ভিস লাইন দ্বারা বিভক্ত দু'দিকের দু'টি কোর্টের মাঝ বরাবর পার্শ্বরেখার সমান্তরালে দু'টি লাইন টেনে রাইট সার্ভিস কোর্ট ও লেফট সার্ভিস কোর্ট নামে দ'টি কোর্ট তৈরি করতে হবে। কোর্টের সকল মার্কিং বা দাগ ৪ সেন্টিমিটার চওড়া হবে।
খ. খেলার সরঞ্জাম
১. পোস্ট বা খুঁটি : খুঁটির উচ্চতা মেঝে থেকে ৫-১ হবে।
২. নেট : নেটের দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট এবং প্রস্থ২ ফুট ৬ ইঞ্চি হবে। মেঝে থেকে নেটের দু'পোস্টের দিকে উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি এবং মাঝখানে মেঝে থেকে ৫ ফুট। নেটের উপরের প্রান্ত ৩ ইঞ্চি চওড়া একটি সাদা ফিতা দিয়ে দু'দিকে মুড়ে দিতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে শক্ত দড়ি বা তার চলে গিয়ে দু'দিকের খুঁটির মাথায় যুক্ত হবে।
৩. র্যাকেট: ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের হাতলের দৈর্ঘ্য ২৬ ইঞ্চি। র্যাকেটের মাথায় নেট থাকে। নেটগুলো টানটান অবস্থায় থাকবে।
৪. শাটল কক : হাঁসের পালক দ্বারা শাটল কক তৈরি হয়। সকল পালক সুতা দ্বারা গাঁথা থাকে। পিছনের রেখার উপর থেকে একজন খেলোয়াড় যখন খুব জোরে উপরের দিকে র্যাকেট দিয়ে শাটল ককে আঘাত করে এবং সেই শাটল কক যদি বিপক্ষ কোর্টের লং সার্ভিস লাইনের কাছাকাছি গিয়ে পড়ে তখনই এই শাটল কক মানসম্পন্ন বলে ধরা হয় ।
ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মাবলি
১. টস : যে খেলোয়াড় বা দল টসে জয়লাভ করবে সে খেলোয়াড় বা সে দল সার্ভিস অথবা কোর্ট নেবে।
২. পয়েন্ট : একক ও দ্বৈত খেলায় ২১ পয়েন্টে গেম সম্পন্ন হবে। তবে ২ পয়েন্টের ব্যবধান থাকতে হবে। যেমন— ১৯–২১, ২০-২২ পয়েন্ট এইভাবে। কিন্তু ৩০ পয়েন্টের উপরে যেতে পারবে না। যে আগে ৩০ পয়েন্ট পাবে সে বিজয়ী হবে। তৃতীয় সেটে ১১ পয়েন্ট হলে প্রান্ত বদল করতে হয়।
৩. সার্ভিস : মহিলা ও পুরুষ এককের খেলায় যে দোষ করবে সে সার্ভিস হারাবে। পুরুষ ও মহিলা ডাবলসের খেলায় যে দল প্রথম সার্ভিস করবে সে দল প্রথমবার সেকেন্ড হ্যান্ড সার্ভিস পাবে না। দোষ করলে বিপক্ষ দল সার্ভিস পাবে। সার্ভিস কোনাকুনি কোর্টে করতে হয়।
৪. সার্ভিস ফল্ট : নিম্নলিখিত কারণে সার্ভিস ফল্ট হয়
ক. শাটলটি কোনাকুনি কোর্টে না পড়লে।
খ. সার্ভিসের সময় কোর্ট থেকে যে কোনো পা শূন্যে উঠে গেলে।
গ. শাটলটি শর্ট সার্ভিস এরিয়ায় বা লং সার্ভিস এরিয়ায় পড়লে।
ঘ. শাটল কোর্টের বাইরে পড়লে।
ঙ. শাটলটি হাত থেকে ছাড়ার পর সার্ভিস না করলে।
চ. শাটলটি কোমরের উপরে তুলে সার্ভিস করলে।
ছ. শাটলটি যদি নেটে আটকে যায়।
জ. সার্ভিস করার সময় কোর্টের দাগ স্পর্শ করলে। ঝ. সার্ভিসকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিলে ।
৫. লেট : খেলা চলাকালীন খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো দৈব দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক খেলা বন্ধ হলে আম্পায়ার লেট ঘোষণা করবেন। যেমন— রিসিভার প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই সার্ভিস করলে কিংবা উভয় খেলোয়াড় একসঙ্গে আইন ভঙ্গ করলে।
৬. ব্যাডমিন্টনে ৫টি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়-
ক. পুরুষ একক, খ. পুরুষ দ্বৈত, গ. মহিলা একক, ঘ. মহিলা দ্বৈত, ঙ. মিশ্র দ্বৈত।
৭. খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি, একজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দুই বা চারজন লাইন জাজ থাকবে।
ব্যাডমিন্টন খেলার কলাকৌশল : ব্যাডমিন্টন খেলার কলাকৌশলকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। ১. গ্রিপ, ২. ফুটওয়ার্ক, ৩. সার্ভিস, ৪. স্ট্রোক ও স্ম্যাশিং
১. গ্রিপ বা র্যাকেট ধরা : র্যাকেট ব্যবহারের প্রথম আবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে র্যাকেট ধরা। র্যাকেট ধরার ক্ষেত্রে কব্জির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফোরহ্যান্ড ও ব্যাকহ্যান্ড শর্ট নেওয়ার সময় গ্রিপের তারতম্য হয়ে থাকে। এজন্য গ্রিপকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক. ফোরহ্যান্ড গ্রিপ ।
খ. ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপ
ক. ফোরহ্যান্ড গ্রিপ : একজন ডানহাতি খেলোয়াড় তার ডানদিক দিয়ে যে শটগুলো খেলে তা সবই ফোরহ্যান্ড গ্রিপের অন্তর্ভুক্ত। ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে র্যাকেটের গোড়া এমনভাবে ধরতে হবে যেন ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতো দেখায় ।
খ. ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপ : ডানহাতি খেলোয়াড় তার শরীরের বামপাশে যে শটগুলো খেলে তা ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপের অবস্থান থেকে হাতটি বাম দিকে এমনভাবে ঘুরাতে হবে যেন হাতের বুড়ো আঙ্গুল র্যাকেটের পিছনে আড়াআড়ি ও কোনাকুনি অবস্থানে থাকে। র্যাকেটের হাতলের শেষ অংশটুকু হাতের তালুর মধ্যে থাকবে।
২. ফুটওয়ার্ক বা পায়ের কাজ : দ্রুত স্ট্রোক নেওয়ার জন্য চমৎকার ফুটওয়ার্ক প্রয়োজন। স্ট্রোকের প্রয়োজনে সামনে, পিছনে, পাশে পা ফেলে, লাফ দিয়ে কিংবা দৌড়ে গিয়ে খেলতে গেলে ফুটওয়ার্ক ভালো হতে হয়। সার্ভিস করা বা সার্ভিস রিসিভ করার সময় একজন ডানহাতি খেলোয়াড়কে বাম পা আগে, ডান পা সামান্য পিছনে এবং হাঁটু সামান্য ভেঙ্গে দাঁড়াতে হয়। শরীরের ওজন পায়ের পাতার উপর থাকে। দু'পা ১৪ থেকে ১৮” দূরত্বে থাকবে। একে স্ট্যান্স বলে। এছাড়া এক পা পিভটিং করে এবং অন্য পা স্থির রেখেও ফুটওয়ার্ক করা হয়।
৩. সার্ভিস : একজন ভালো খেলোয়াড়কে তিন ধরনের সার্ভিসের কৌশল জানতে হয় ৷
ক. হাইডিপ সার্ভিস, খ. লো-সার্ভিস, গ. ড্রাইভ সার্ভিস
ক. হাইডিপ সার্ভিস : যখন খুব উঁচু দিয়ে শাটল খাড়াভাবে বিপক্ষ কোর্টের লং সার্ভিস লাইনের কাছে ফেলা হয় তাকে হাইডিপ সার্ভিস বলা হয়। এর উচ্চতা অনেক সময় ২০ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। একক খেলায় ফোরহ্যান্ড গ্রিপ ব্যবহার করে এই সার্ভিস করা হয়।
খ. লো-সার্ভিস : শাটল যখন খুব নিচু দিয়ে বিপক্ষের সার্ভিস এলাকার শট সার্ভিস লাইন দ্বারা যুক্ত কোনায় ফেলা হয় তখন একে লো-সার্ভিস বলা হয়। র্যাকেটটি তখন ফোরহ্যান্ড গ্রিপে ধরা থাকে। গ. ড্রাইভ সার্ভিস : নিচু দিয়ে সজোরে শাটলটি পিছনে বা সার্ভিস গ্রহণকারীর ডানদিক বরাবর সার্ভিস করলে অনেক সময় ভালো ফল দেয়। সজোরে এই সার্ভিসটি করা হয় বলে একে ড্রাইভ সার্ভিস বলে।
৪. স্ট্রোক ও স্ম্যাশিং : স্ট্রোক বা আঘাত করার কৌশলকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো—
ক. ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক : ডানহাতি খেলোয়াড়ের বাম পা বা কাঁধ নেটের দিকে থাকবে এবং শরীরের ডান পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। র্যাকেট পিছনে নেওয়ার সময় ডান পায়ের উপর দেহের ভর থাকবে। শাটলে আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ওজন ডান পা থেকে বাম পায়ের উপর চলে আসবে।
খ. ব্যাকহ্যান্ড শট : ডানহাতি খেলোয়াড়ের শরীরের বাম পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। এজন্য ডান কাঁধ ও ডান পা নেটের দিকে থাকবে।
গ. ওভারহ্যান্ড শট : প্রথমত বাম পা সামনে রেখে ডান পায়ের উপর শরীরের ওজন রাখতে হবে। শট নেওয়ার সময় শাটলের দিকে চোখ রেখে শরীর পিছনের দিকে একটু ঝুঁকে যাবে এবং মাথার উপর নিয়ে পিছন দিক দিয়ে র্যাকেট তুলে এনে শাটলে আঘাত করতে হবে।
ঘ. ড্রপ শট : এ শটের কৌশল হচ্ছে শাটল নেটের সামান্য উপর দিয়ে নেট পার হয়ে বিপক্ষ কোর্টে গিয়ে পড়বে।
ঙ. আন্ডারহ্যান্ড ড্রপ শট : সার্ভিস করার সময় র্যাকেট সুইং করে শাটলে লাগার সাথে সাথে র্যাকেটের গতি রোধ করতে হবে।
চ. স্ম্যাশিং : মাথার উপর শট নেওয়ার কৌশলে র্যাকেট ধরা হাতটি পিছন থেকে সুইং করে উপরে উঠবে এবং যে মুহূর্তে র্যাকেট শাটল স্পর্শ করতে যাচ্ছে তখনই হাতের কব্জি নিচের দিক করে সজোরে শাটলে আঘাত করতে হবে। এর ফলে শাটলটি দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাবে এবং বিপক্ষের কোর্টে গিয়ে আছড়ে পড়বে। খেলোয়াড় লাফিয়ে উঠেও স্ম্যাশিং করতে পারে।
কাজ-১ : ব্যাডমিন্টন কোর্টটি অঙ্কন করে দেখাও ৷ কাজ-২ : ব্যবহারিক ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের গ্রিপের কৌশলগুলো প্রদর্শন কর। কাজ-৩ : সার্ভিসের ফন্টগুলো এক দল বলবে ও অপর দল ভুল হলে শুধরে দিবে। |
ভলিবল একটি দলগত খেলা। খোলা জায়গায় কিংবা জিমন্যাশিয়ামে সকল বয়সের নারী-পুরুষ ভলিবল খেলতে পারে। এই আনন্দপূর্ণ খেলাটির উদ্ভব ঘটে আমেরিকায়। ১৮৯৫ সালে হলিউকের ওয়াই.এম.সি.এ কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক উইলিয়াম জি. মরগ্যান এ খেলা আবিষ্কার করেন। ১৮৯৬ সালে আমেরিকার স্প্রিং ফিল্ড কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকরাই এ খেলার ধরন অনেকটা ভলি-এর মতো দেখে এর নাম ভলিবল রাখেন। ১৯৪৭ সালের ২০ এপ্রিল ফ্রান্সের পল লিবার্ড-এর প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয়। তখন থেকে বাংলাদেশে ভলিবল খেলার প্রসার ও জনপ্রিয় করতে এই ফেডারেশন কাজ করে আসছে।
ভলিবল খেলার আইনকানুন-
ক. খেলার কোর্ট
১. খেলার কোর্ট : খেলার কোর্ট হবে একটি আয়তক্ষেত্র যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপ যথাক্রমে ১৮ মিটার x ৯ মিটার। কোর্টের মেঝে থেকে ৭ মিটার উচ্চতার মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
২. বাউন্ডারি লাইন : কোর্টের চতুর্দিকের সীমানা ৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাউন্ডারি শাইন দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। বাউন্ডারি লাইন থেকে চারদিকে ২ মিটার বিস্তৃত স্থান প্রতিবন্ধকতা মুক্ত থাকতে হবে।
৩. সেন্টার লাইন : কোর্টের দুই পার্শ্বরেখাকে সমান দুভাগে ভাগ করে একটি রেখা টেনে দু'দিকে যুক্ত করতে হবে। এই রেখাটি ভলিবল নেটের সরাসরি নিচে হবে এবং দুভাগে বিভক্ত করবে।
৪. এ্যাটাক এরিয়া : মধ্য লাইনের সমান্তরালে মধ্য লাইন থেকে ৩ মি. দূরে একটি লাইন টানতে হবে যার দু'প্রান্ত দুই পার্শ্বের লাইনের সাথে গিয়ে মিশবে। মধ্য লাইন বা মধ্যরেখা দ্বারা বিভক্ত দু'টি কোর্টে ২টি অ্যাটাক এরিয়া তৈরি হবে, এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে যথাক্রমে ৯ মিটার × ৩ মিটার ।
৫. সার্ভিস এরিয়া : ব্যাক লাইনের পিছনে পুরো জায়গা এবং ব্যাক লাইন থেকে ২০ সে:মি: ফাঁক রেখে ১৫ সে:মি: দাগ দিতে হবে। এর ভিতরের জায়গাকে সার্ভিস এরিয়া বলে।
৬. তাপমাত্রা : যদি ইনডোর কোর্ট হয় তাহলে কোর্টের তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াস অথবা ৫০° ফারেনহাইটের নিচে
হবে না।
খ. নেট
১. মাপ ও গঠন : নেটের দৈর্ঘ্য ১.৫ মিটার এবং প্রস্থ ১ মিটার হবে। নেটের প্রতিটি ঘর ১০ সেন্টিমিটার বর্গাকার হবে। নেটের উপরের প্রান্তদেশ ৫ সেন্টিমিটার চওড়া সাদা ক্যানভাস কাপড় দ্বারা দু ভাঁজ করে মোড়া থাকবে। এই ক্যানভাসের মধ্য দিয়ে নমনীয় তার বা রশি ঢুকিয়ে নেটের উপরের প্রান্তদেশ সোজা টানা অবস্থায় রাখতে হবে।
২. নেটের উচ্চতা : নেটের মাঝামাঝি জায়গায় ভূমি থেকে শীর্ষদেশের উচ্চতা পুরুষদের জন্য ২.৪৩ মিটার, মহিলাদের জন্য ২.২৪ মিটার হবে।
৩. সাইড মার্কার ও অ্যান্টেনা : সাইড লাইন ও সেন্টার লাইনের সংযোগস্থলে ৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি সাদা ফিতা নেটের সাথে লম্বভাবে ঝুলানো থাকবে যা প্রয়োজনে সরানো যায়। ফাইবার গ্লাস বা অনুরূপ কোনো বস্তু দিয়ে তৈরি ২টি অ্যান্টেনা পাশের সাদা ফিতার উপরে লম্বভাবে দুই দিকে বেঁধে দিতে হবে।
গ. বল, খেলোয়াড় ও খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম
১. বল : বল গোলাকার ও নরম চামড়া দিয়ে তৈরি হবে। ভিতরে নরম ব্লাডার থাকবে। বলের পরিধি ৬৭ সে:মি: হবে।
২. দল : প্রতি দল ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হবে। খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে একজন ক্যাপটেন নিয়োজিত থাকবে। তার বুকের বাম পার্শ্বে একটি প্রতীক চিহ্ন বা ফিতা লাগাতে হবে।
৩. খেলোয়াড়দের সাজ-সরঞ্জাম : জার্সি, শর্টস এবং হিল ছাড়া হালকা নমনীয় জুতা হচ্ছে খেলার পোশাক। সকল খেলোয়াড়ের একই রঙের পোশাক থাকবে। জার্সির সামনে ও পিছনে জার্সি থেকে ভিন্ন রঙের একই নম্বর হবে।
৪. কোর্টে খেলোয়াড়দের অবস্থান : কোর্টে ৬ জন খেলোয়াড় অবস্থান নেবে। ৩ জন থাকবে অ্যাটাক এরিয়ায়, অপর ৩ জন পিছনের কোর্টে। খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়দের অবস্থান ও রোটেশন সম্পর্কে আম্পায়ারকে তথ্য দিতে হবে যাতে এই রোটেশন গেম বা সেট সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকে। তবে প্রতি সেট শুরুর আগে রোটেশন অর্ডার পরিবর্তন করা যায় ৷
ঘ. খেলা
১. খেলার প্রস্তুতি ও টস : কোর্টে খেলোয়াড় প্রবেশের পূর্বে রেফারি দুই অধিনায়কের উপস্থিতিতে টস করবেন এবং টসে জয়ী অধিনায়ক সার্ভিস বা কোর্ট পছন্দ করবে। এরপর খেলোয়াড়েরা ৩ মিনিট ওয়ার্ম আপ অনুশীলন করতে পারবে। বদলি খেলোয়াড় ও কোচ রেফারির বিপরীতে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে।
২. রোটেশন : ৬ জন খেলোয়াড় ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘোরে সেভাবে রোটেশন করবে। বিপক্ষ দলের সার্ভিস নষ্ট হওয়ার পর যখন অপর দল সার্ভিস করবে তখন এই রোটেশন সম্পন্ন করতে হবে। রোটেশনে ভুল হলে রেফারি প্রয়োজনীয় শাস্তির বিধান করবেন।
৩. টাইম আউট : বল যখন খেলার বাইরে যায় অর্থাৎ ডেড হয় তখন কোচ বা ক্যাপটেনের অনুরোধে রেফারি টাইম আউট দিতে পারেন। প্রতিটি খেলায় একটি দল সর্বাধিক দু'টি টাইম আউট এবং ৬ জন খেলোয়াড় পরিবর্তনের জন্য সাময়িক বিরতি নিতে পারে। টাইম আউটের সময় খেলোয়াড়েরা পার্শ্ব রেখার কাছাকাছি আসতে পারবে কিন্তু কোর্টের বাইরে যেতে পারবে না
৪. খেলোয়াড় বদল : ৬ জন খেলোয়াড় কোর্টে খেলবে এবং অতিরিক্ত ৬ জন খেলোয়াড় কোচসহ নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এই অতিরিক্ত খেলোয়াড় কোচ কিংবা ক্যাপটেনের অনুরোধে কোর্টের খেলোয়াড়দের সাথে বদল করা যাবে।
৫. খেলা পরিচালনা : একজন রেফারি, একজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দু'জন লাইন জাজ দ্বারা খেলা পরিচালনা করা হয়। কোর্টে খেলা শুরুর সময় থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। রেফারি নেটের যে কোনো এক প্রান্তে উঁচু জায়গায় অবস্থান করবেন যাতে নেটের কমপক্ষে ৫০ সেন্টিমিটার উপর থেকে কোর্টের সব জায়গায় খেলা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
৬. কোর্ট বদল : যদি চূড়ান্ত সেট না হয় তাহলে প্রতি সেট শেষ হওয়ার পর উভয় দল কোর্ট বদল করবে। চূড়ান্ত সেটে কোনো দল ৮ পয়েন্ট অর্জন করলে উভয় দল রেফারির সংকেত পেয়ে কোর্ট বদল করবে।
৭. খেলার ফলাফল : যে দল সার্ভিস করবে সেই দল যদি বলটির র্যালির সমাপ্তিতে জিততে পারে তবে একটি পয়েন্ট সংগৃহীত হবে। আর যদি ঐ র্যালিতে হেরে যায় তবে বিপক্ষ দল সার্ভিস ও পয়েন্ট পাবে। যে দল প্রথম ২৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করবে সে দল ঐ সেটে জয়ী হবে। তবে ঐ দলকে বিপক্ষ দল থেকে কমপক্ষে ২ পয়েন্ট বেশি থাকতে হবে। যদি উভয় দলের পয়েন্ট সমান হয় তাহলে এই ২ পয়েন্টের ব্যবধান না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকবে। ৫ সেটের প্রতিযোগিতায় যে দল ৩ সেটে জয়ী হবে সে দল প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করবে। চূড়ান্ত সেট ১৫ পয়েন্টে সম্পন্ন হয়।
৮. সার্ভিস : পিছনের কোর্টের রোটেশন অনুযায়ী সর্বডানের খেলোয়াড় সার্ভিস করবে। সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে বল হাত থেকে শূন্যে ছেড়ে দিয়ে আঘাত করে বিপক্ষ কোর্টে প্রেরণ করতে হবে। তবে রেফারি সার্ভিসের জন্য সংকেত দেওয়ার পরই কেবলমাত্র সার্ভিস করা যাবে। সার্ভিসের বল নেটের নিচ দিয়ে গেলে, নেট স্পর্শ করলে, নেটের অ্যান্টেনা ছুঁয়ে গেলে কিংবা বিপক্ষ কোর্টের বাইরে পড়লে সার্ভিসে ত্রুটি হবে এবং বিপক্ষ দল সার্ভিস করবে।
৯. বল খেলা : সার্ভিসের বা তার পরের কোনো বল কোর্টে আনার পর সে দল সর্বাধিক ৩ বার বলটি খেলতে পারবে এবং ৩ বার স্পর্শ করার পর বলটি বিপক্ষ কোর্টে প্রেরণ করতে হবে। বল অন্য সময় শরীরে স্পর্শ করলে একবার খেলা হয়েছে বলে ধরা হবে। খেলার সময় বল চেপে ধরে মারা, জোর করে বল উপরে তোলা, ঠেলে দেওয়া বা হাত দিয়ে টেনে আনাকে হোল্ডিং বলে ধরা হবে।
১০. ব্লক : বিপক্ষের শ্যাশ করা বা চাপ মারার বল কোর্টের সামনের সারির এক বা একাধিক খেলোয়াড় প্রতিহত করার জন্য লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে ব্লক করতে পারে। ব্লকের পর বল যে কোর্টে যাবে সে পক্ষ ৩ বার বলটি খেলতে পারবে। পিছনের সারির খেলোয়াড় ব্লকে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
১১. নেটের বল : কেবলমাত্র সার্ভিস বল ছাড়া অন্য সময় বল নেটে লাগতে পারে। নেটে লাগা বল ৩ বার খেলা যাবে। তবে সজোরে নেটে লেগে বা কোনো খেলোয়াড়ের শরীর স্পর্শ করলে একবার খেলা হয়েছে বলে ধরা হয়। বিপক্ষ কোর্ট থেকে বল নেটের উপর নিজ কোর্টে না আসা পর্যন্ত নেটের উপর যে বল থাকে তা খেলা যাবে না। তবে স্পর্শ করার বা চাপ মারার পর গতির কারণে হাত নেটের উপর দিয়ে বিপক্ষ কোর্টে যেতে পারে। পিছনের সারির খেলোয়াড় নেটে গিয়ে চাপ মারতে পারবে না।
১২. সেন্টার লাইন পার হওয়া : খেলা চলাকালে কোনো খেলোয়াড়ের শরীরের কোনো অংশ বা গা সেন্টার লাইন পার হয়ে বিপক্ষ কোর্টে স্পর্শ করতে পারবে না বা কাউকে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না।
ভলিবল খেলার কলাকৌশল
ক. সার্ভিস : এক হাতে বল শূন্যে তুলে অপর হাত খোলা বা মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় জোরে আঘাত করে বিপক্ষের কোর্টে প্রেরণ করাকে সার্ভিস বলে। যদি সার্ভিস করা বা নেট বা অ্যান্টেনা স্পর্শ না করে, নেটের নিচ দিয়ে না যায় কিংবা বিপক্ষ কোর্টের বাইরে না পড়ে তাহলে সার্ভিস সঠিক বলে গণ্য হবে। সার্ভিস সাধারণত দুই প্রকার- ১. আন্ডার হ্যান্ড সার্ভিস, ২. টেনিস সার্ভিস।
১. আন্ডার হ্যান্ড সার্ভিস : বিপক্ষ কোর্টের দিকে মুখ করে সার্ভিস এরিয়াতে এক পা সামনে ও আরেক পা পিছনে রেখে দাঁড়াতে হবে। দুই পায়ের মাঝে কিছুটা ফাঁক থাকবে। দুই হাঁটু সামান্য ভেঙ্গে পিছনের পায়ে দেহের ওজন রেখে দাঁড়াতে হবে। বাম হাতের তালুতে বল রেখে ডান হাতকে সোজা পিছনের দিকে নিতে হবে। বাম হাতের বল শূন্যে তোলার পর ডান হাত পিছন দিক থেকে সামনে এনে সজোরে বলে আঘাত করতে হবে। বিপক্ষ কোর্টের দিকে মুখ না করে কোর্টের পার্শ্ব রেখার দিকে মুখ করে হাতের এক পাশ দিয়ে আঘাত করেও সার্ভিস করা যেতে পারে।
২. টেনিস সার্ভিস : সার্ভিস এরিয়ায় পা দুটোকে আড়াআড়ি করে দুস্পায়ের উপর শরীরের ওজন রেখে দাঁড়াতে হবে। ডান হাতে সার্ভিস করা হলে বাম পা'কে সামনে নিতে হবে। হাঁটু দুটি সামান্য ভেঙ্গে বাম হাতের তালুতে রাখা বল মাথার উপর প্রায় ১ মিটার উঁচুতে ছুড়ে দিতে হবে এবং বলটি নিচে নামার সাথে সাথে ডান হাত পিছন দিক থেকে কাঁধের উপরে এনে সজোরে আঘাত করতে হবে। সার্ভিসের পর পরই ভারসাম্য রক্ষার জন্য শরীরের ওজন পিছনের পা থেকে সামনের পায়ে নিয়ে আসতে হড়ান
খ. রোটেশনে দাঁড়ানো ৬ জন খেলোয়াড়ের ক্রমিক নম্বর যদি ১ থেকে ৬ নম্বর হয় তাহলে সামনের কোর্টে ৩ জন এবং পিছনের কোর্টে ৩ জন দাঁড়াবে। সামনের কোর্টের ৩ জনের অবস্থান হবে- ডান দিকের ২ নম্বর, মধ্যখানে ৩ নম্বর এবং বাম দিকে ৪ নম্বর এবং পিছনের কোর্টে ৫ নম্বর সর্ব বামে, মধ্যখানে ৬ নম্বর এবং সর্ব ডানে ১ নম্বর খেলোয়াড় দাঁড়াবে। বিপক্ষ দলে সার্ভিস হারালে এই দল সার্ভিস করবে। তখন রোটেশন করতে হবে নিয়মানুযায়ী ১ নম্বর খেলোয়াড় পিছনের কোর্টের ৬ নম্বর খেলোয়াড়ের জায়গায় গিয়ে সার্ভিস করবে। এভাবে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের অবস্থান পরিবর্তিত হবে। রোটশন হবে ঘড়ির কাটা অনুযায়ী, সাজানো হবে ঘড়ির কাটার বিপরীত অনুযায়ী।
গ. পাসিং : বল পাসকে সাধারণত দু'ভাগে ভাগ করা যায়- (১) ওভার হেড পাস ও (২) আন্ডার হ্যান্ড পাস।
ঘ. সেট-আপ (Set-up) : কোর্টের সম্মুখ সারির কোনো খেলোয়াড় আন্ডার হ্যান্ড পাস বা ডিগিং থেকে প্রাপ্ত বা দুই হাতের প্রসারিত তালু ও আঙ্গুল সহযোগে নেটের কাছাকাছি উপরে উঠিয়ে দেবে এবং স্যানকারী দৌড়ে এসে অথবা স্বীয় জায়গায় লাফ দিয়ে উঁচুতে উঠে কল ম্যাশ করবে। সেট-আপ যত সুন্দর হবে ম্যাশও তত নিখুঁত হবে।
6.স্ম্যাশিং ( Smashing) : স্ম্যাশিং-এর বলটিকে অবশ্যই নেটের উপরে থাকতে হবে। কলকে যেখানে স্ম্যাশ করতে হবে সেখান থেকে ৩-৪ পা পিছনে খেলোয়াড়দের অবস্থান থাকবে। সেখান থেকে দৌড়ে এসে লাফিয়ে উঠে শরীরকে বলের পিছনে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য দু'হাঁটু ভাঁজ করে লাফ দিতে হবে যাতে উঁচুতে উঠা যায়। যে হাতে ম্যাশ করতে হবে সেটা পিছন দিক থেকে ঘুরিয়ে বলের উপর নিতে হবে। শ্যাশ করার পর শরীর সোজা নিচে নেমে আসবে। অনেক সময় বিপক্ষ দলকে ভুল বুঝানোর জন্য বল ম্যাশ না করে হাতের সাহায্যে বিভিন্ন দিকে ঠেলে দেওয়া হয়
চ. ব্লকিং (Blocking) : বিপক্ষ দলের ম্যাশকে প্রতিরক্ষা করার জন্য কোর্টের সামনের সারির এক বা একাধিক খেলোয়াড় পরস্পরের হাত পাশাপাশি রেখে লাফিয়ে উঠে শ্যাশ প্রতিরোধ করতে পারে। ব্লক দেওয়ার সময়ে জোড়া পায়ে উপরে লাফিয়ে উঠতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন ব্লকিং করার সময়ে হাত নেট স্পর্শ না করে।
কাজ-১ : ভলিবল খেলার রোটেশন পদ্ধতির ছক অঙ্কন কর। কাজ-২ : টেনিস সার্ভিসের কলাকৌশলগুলো প্রদর্শন কর। কাজ-৩ : ব্লকিং করার পদ্ধতিটি করে দেখাও । |
পাক-ভারত উপমহাদেশের এটি একটি জনপ্রিয় প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন নামে খেলাটি অনুষ্ঠিত হতো। যেহেতু আঞ্চলিক খেলা তাই বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না । গ্রামাঞ্চলে এই হা-ডু-ডু খেলাই ছিল বিনোদনের একমাত্র উৎস। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের খেলাধূলায় গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন পুনর্গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় । বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের প্রচেষ্টায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২য় সাফ গেমসে কাবাডি অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকেই কাবাডি খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। ১৯৯০ সালে বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ।
কাবাডি মাঠ : মাঠ হবে সমান্তরাল এবং নরম। মাটি অথবা ম্যাট দ্বারা তৈরি হবে। কাবাডি খেলায় তিন ধরনের মাঠ রয়েছে-
১. পুরুষ ও জুনিয়র বালক।
২. মহিলা ও জুনিয়র বালিকা
৩. সাব-জুনিয়র বালক ও বালিকা।
১. পুরুষ বলতে যাদের ওজন ৮০ কেজি বা তার নিচে তাদেরকে বোঝায়। জুনিয়র বালক বলতে যাদের ওজন ৬৫ কেজি বা তার নিচে এবং বয়স সর্বোচ্চ ২০ বছর এদের মাঠের মাপ দৈর্ঘ্য-
২. মহিলা বলতে যাদের ওজন ৭০ কেজি বা তার নিচে তাদেরকে বোঝায়। জুনিয়র বালিকা বলতে যাদের ওজন ৬০ কেজি বা তার নিচে এবং বয়স সর্বোচ্চ ২০ বছর। মাঠের দৈর্ঘ্য হবে ১২ মি: ও প্রস্থ ৮মি: (নবিসহ)। কাবাডি মাঠ (সাব জুনিয়র বালক-বালিকা) ৩. সাব-জুনিয়র বালক-বালিকা উভয়ের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর এবং ওজন ৫০ কেজি বা তার নিচে। এদের জন্য মাঠের মাপ হবে দৈর্ঘ্য ১১ মি: × প্রস্থ ৮ মি: (লবিসহ)।
সিটিং ব্লক
স্ট্রাগলের পূর্বে পুরুষ ও জুনিয়র বালকদের উভয় দিকের লবি বাদে দৈর্ঘ্য ১৩ মি: × প্রস্থ ৮ মি মহিলা ও জুনিয়র বালিকাদের দৈর্ঘ্য ১২ মি: × প্রস্থ ৬ মি: এবং সাব-জুনিয়র বালক-বালিকাদের দৈর্ঘ্য ১১ মিটার × প্রস্থ ৬ মিটার।
সিটিং ব্লক : মরা খেলোয়াড়দের বসার জন্য যে জায়গা সংরক্ষিত রাখা হয় তাকে সিটিং ব্লক বলে। কাবাড়ি কোর্টের প্রান্তরেখা থেকে ২ মি: দূরে পুরুষদের জন্য ১ × ৮ মিটার ও মহিলা ও জুনিয়র বালিকাদের জন্য ১ × ৬ মিটার দুটি ঘর থাকবে। তাকে সিটিং ব্লক বলে।
লবি : খেলার মাঠের উভয় দিকে ১ মি: চওড়া যে জায়গা আছে তাকে লবি বলে। স্ট্রাগল হলে লবি খেলার মধ্যে চলে আসে।
মধ্য রেখা : যে রেখা কোর্টকে সমান দু'ভাগে ভাগ করেছে তাকে মধ্যরেখা বলে ।
কোর্ট : প্রত্যেক অর্থের খেলার মাঠ যা মধ্যরেখা দ্বারা বিভক্ত তাকে কোর্ট বলে।
বক লাইন : মধ্যরেখার সমান্তরালে কোর্টের দিকে যে দাগ দেওয়া হয় তাকে বক লাইন বলে। যার দূরত্ব পুরুষ ও জুনিয়র বালকদের ৩.৭৫ মিটার, মহিলা এবং জুনিয়র বালিকাদের ৩ মিটার এবং সাব-জুনিয়র বালক- বালিকাদের ৩ মিটার ।
বোনাস লাইন : এন্ড লাইনের সমান্তরালে বক লাইনের দিকে ১ মিটার দূরে যে রেখা টানা হয় তাকে বোনাস লাইন বলে।
দম : এক নিঃশ্বাসে এক নাগাড়ে অনবরত সুস্পষ্টভাবে কাবাডি কাবাডি উচ্চারণ করাকে দম বলে ।
রেইডার : দম নিয়ে যে খেলোয়াড় বিপক্ষ কোর্টে হানা দেয় তাকে রেইডার বলে। বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার পূর্বেই দম ধরতে হয়।
এন্টি রেইডার : যে কোর্টে দম চলছে সেই কোর্টের সমস্ত খেলোয়াড়কে এন্টি রেইডার বলে। দম হারানো : রেইডার যদি স্পষ্টভাবে এবং অনবরত কাবাডি না বলে বা দম ছেড়েছে বুঝা যায় তাহলে দম হারানো হয়েছে বলে ধরা হবে।
এন্টিকে মারা : রেইডার যদি কোনো নিয়ম ভঙ্গ না করে এন্টির শরীরের যে কোনো অংশ স্পর্শ করে অথবা এন্টি রেইডারের শরীরের যে কোনো অংশ ধরা সত্ত্বেও দমসহ নিজ কোর্টে ফিরে আসে তাহলে এন্টি মারা হয়েছে বলে ধরা হবে।
রেইডারকে ধরা : কোনো নিয়ম ভঙ্গ না করে কোনো রেইডার যদি দম থাকা পর্যন্ত বা আম্পায়ারের বাঁশি না দেওয়া পর্যন্ত ধরে রাখে তাহলে রেইডারকে ধরা হয়েছে বলে গণ্য হবে। স্পর্শ : রেইডার যদি এন্টির শরীর বা শরীরের পরিধেয় পোশাক স্পর্শ করে তাহলে টাচ বা স্পর্শ হয়েছে বলে ধরা
হবে।
স্ট্রাগল : যখন কোনো এন্টি বা এন্টিস রেইডারের সংস্পর্শে আসে তখন তাকে স্ট্রাগল বলে। স্ট্রাগল হলে লবি খেলার মধ্যে চলে আসে।
খেলার নিয়মাবলি
১। টসে যে দলের ক্যাপ্টেন জয়লাভ করবে সে তার পছন্দমতো রেইড/কোর্ট নেবে। পরাজিত দলের ক্যাপ্টেন
অবশিষ্ট পছন্দ গ্রহণ করবে। দ্বিতীয়ার্ধে কোর্ট বদল হবে। খেলার শুরুর সময় যে দল দম দিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে অপর দল দম দিয়ে খেলা শুরু করবে।
২। খেলোয়াড়ের শরীরের যে কোনো অংশ বাউন্ডারির বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে সে মরা হবে। স্ট্রাগল হলে বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে ঐ খেলোয়াড় মরা হবে না যদি তার শরীরের কোনো অংশ বাউন্ডারির ভিতরের ভূমির সাথে সংস্পর্শ থাকে।
৩। (ক) খেলার সময় যদি কোনো খেলোয়াড় বাউন্ডারির বাইরে যায় তাহলে সে আউট হবে। রেফারি/আম্পায়ার তার নম্বর কল করে তৎক্ষণাৎ ঐ খেলোয়াড়কে কোর্টের বাইরে নিয়ে যাবে। এ সময় বাঁশি বাজানো চলবে না, রেইড চলতে থাকবে।
(খ) রেইড চলাকালে কোনো এন্টি বা এন্টিস বাউন্ডারি সীমার বাইরে গিয়ে বা বাইরের ভূমি স্পর্শ করে রেইডারকে ধরে তাহলে রেইডার আউট হবে না, ঐ এন্টি আউট হবে।
৪। স্ট্রাগল শুরু হলে লবি খেলার মাঠ হিসেবে গণ্য হবে। স্ট্রাগলের সময় বা স্ট্রাগলের পরে যে সমস্ত খেলোয়াড় স্ট্রাগলে জড়িত ছিল তারা লবি ব্যবহার করে নিজ কোর্টে ফিরতে পারবেন।
৫। রেইডার অনুমোদিত শব্দ কাবাডি উচ্চারণ করে দম নেবে। যদি রেইডার ঠিকমতো কাবাডি উচ্চারণ না করে তাহলে রেফারি/আম্পায়ার কলব্যাক করবে এবং বিপক্ষদল একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট পাবে।
৬। রেইডার বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার পূর্বেই দম ধরতে হবে। যদি সে দম দেরিতে বা কোর্ট স্পর্শ করে ধরে তাহলে রেফারি/আম্পায়ার তাকে ব্যাক করাবে এবং বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট ও দম দেওয়ার সুযোগ দেবে।
৭। দম দেওয়ার সুযোগ (Turn) না থাকা সত্ত্বেও যদি রেইডার দম দেওয়ার জন্য বিপক্ষের কোর্টে প্রবেশ করে তাহলে তাকে রেফারি/আম্পায়ার ব্যাক করাবে ও বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট দেবে। প্রতিযোগিতার নিয়মাবলি
১। দল : প্রত্যেক দল কমপক্ষে ১০ জন, সর্বাধিক ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হবে। ৭ জন খেলোয়াড় মাঠে একসাথে খেলবে বাকি খেলোয়াড় বদলি হিসেবে থাকবে।
২। খেলার সময় : পুরুষ এবং জুনিয়র বালকদের জন্য খেলার সময় হবে প্রত্যেক অর্ধে ২০ মিনিট করে, মাঝে বিরতি ৫ মিনিট। মহিলা বা জুনিয়র বালিকা ও সাব-জুনিয়র বালক ও বালিকা তাদের খেলার সময় হবে প্রতি অর্থে ১৫ মিনিট করে। মাঝে বিরতি ৫ মিনিট। বিরতির পর কোর্ট বদল হবে। প্রথম অর্ধে যে কয়জন খেলোয়াড় মাঠে ছিল দ্বিতীয়ার্ধে ঐ কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
৩। পয়েন্ট গণনার পদ্ধতি : এক পক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড় মরার জন্য বিপক্ষদল এক পয়েন্ট করে পাবে।
এক পক্ষের সমস্ত খেলোয়াড় মরা হলে বিপক্ষ দল সোনার জন্য অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট পাবে ।
৪। টাইম আউট : ক) একেক দল প্রত্যেক অর্ধে দুইবার টাইম আউট নিতে পারবে। যার স্থিতিকাল হবে ৩০ সেকেন্ড। দলনেতা, প্রশিক্ষক বা দলের একজন খেলোয়াড়ও টাইম আউট রেফারির অনুমতি সাপেক্ষে নিতে পারবে। টাইম আউটের সময় খেলার সময়ের সাথে যোগ হবে।
খ) টাইম আউটের সময় খেলোয়াড়গণ কোর্টের বাইরে যেতে পারবে না বা কোর্ট ত্যাগ করতে পারবে না। যদি
এ নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে বিপক্ষ দল একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট পাবে।
গ) অফিসিয়াল টাইম আউট খেলোয়াড় আহত হলে, মাঠে পুনরায় দাগ দেওয়ার জন্য বা বহিরাগত দ্বারা খেলা ব্যাহত হলে অথবা এই জাতীয় কোনো ঘটনার জন্য কেবল রেফারি/আম্পায়ার টাইম আউট দেবেন। এই টাইম আউটের সময়ও মূল সময়ের সাথে যোগ হবে।
৫। বদলি
ক) অতিরিক্ত ৫ জন খেলোয়াড়ই রেফারির অনুমতি নিয়ে টাইম আউট অথবা বিরতির সময় বদল করা যাবে।
খ) বদলিকৃত খেলোয়াড় পুনরায় মাঠে নামতে পারবে। কাবাডি খেলার কলাকৌশল কাবাডি খেলায় দুই ধরনের কৌশল আছে-
(১) রক্ষণাত্মক কৌশল (২) আক্রমণাত্মক কৌশল
১. রক্ষণাত্মক কৌশল : এন্টি রেইডার বা যে কোর্টে দম চলছে ঐ কোর্টের সমস্ত খেলোয়াড় যে কৌশল অবলম্বন করে তাকে রক্ষণাত্মক কৌশল বলে। যেমন-
(ক) গোড়ালি ধরা (খ) হাঁটু ধরা (গ) কোমর ধরা (ঘ) হাতের কব্জি ধরা (3) চেইন দিয়ে ধরা ইত্যাদি।
গোড়ালি ধরা